জিউস্ (Zeus)
জিউস ছিলেন দেবতাদের অধিপতি, মানব ও বজ্রের দেবতা এবং অলিম্পাসের শাসনকর্তা। রোমান পৌরাণিক কাহিনীতে জিউস জুপিটার(Jupiter) নামে পরিচিত। হেসিয়ডের থিওজেনি (Hesiod’s Theogony) গ্রন্থের মতে, জিউস বিভিন্ন দেবতাদের মধ্যে তাঁদের দায়িত্ব বণ্টন করে দেন। তিনি ক্রোনাস (Cronus) ও রেয়ার (Rhea) কনিষ্ঠ সন্তান।
ক্রোনাস গাইয়া (Gaea) ও ইউরেনাসের (Uranus) থেকে তিনি জেনেছিলেন যে তিনি যেমন নিজের পিতাকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিলেন, তেমনই তাঁর নিজের সন্তানই একদিন তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করবে। এ কারণে ক্রোনাস তাঁর সন্তাদের জন্মমাত্রই গলাধঃকরণ করে ফেলতেন।
জিউসের জন্মের পর একইভাবে তাঁকেও গিলে ফেলতে চেয়েছিলেন ক্রোনাস। কিন্তু মা রিয়ার চেষ্টায় রক্ষা পান জিউস। গাইয়ার পরামর্শ মতো রিয়া ক্রিটে জিউসের জন্ম দেন এবং শিশুর কাপড়ে জড়িয়ে একটি পাথর ক্রোনাসের হাতে তুলে দেন। এই পাথরটিই গিলে ফেলেন ক্রোনাস।
বয়ঃপ্রাপ্তির পর জিউস ক্রোনাসকে বমি করে তাঁর ভাই-বোনদের বের করে দিতে বাধ্য করেন। এরপর টারটারাসের (Tartarus) রক্ষক ক্যাম্পেকে (Campe) হত্যা করে তিনি ক্রোনাসের ভাই জাইগ্যানেটস (Gigantes), হেক্টনকারস(Hecatonchires) ও সাইক্লোপসদের (Cyclopes) উদ্ধার করেন। কৃতজ্ঞতার নিদর্শন স্বরূপ সাইক্লোপসরা জিউসকে বজ্র ও বিদ্যুৎ প্রদান করেন।
পরে জিউস জাইগ্যানেটস, হেক্টনকারস, সাইক্লোপস এবং নিজ ভাইবোনদের সহয়তায় যুদ্ধ করে তাঁর পিতা ক্রোনাসকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। দীর্ঘ ১০ বছর স্থায়ী এ যুদ্ধটি গ্রীক পৌরাণিক কাহিনীতে টাইটানোমেশি (Titanomachy) নাম বিখ্যাত।
এরপর তিনি তাঁর অপর দুই বড়ো ভাইয়ের পোসেইডন (Poseidon) এবং হেডস্ (Hades) এর সাথে বিশ্বচরাচর ভাগ করে নেন। পোসেইডন হন সমুদ্রে দেবতা, হেডস্ হন পাতাল এবং মৃত্যুর দেবতা। আর জিউস হন আকাশ, স্বর্গ এবং অলিম্পাসের অধিপতি।
হেডিস্ (Hades)
হেডিস্ ছিলেন পাতলপূরী এবং মৃত্যুর দেবতা। তিনি ক্রোনাস (Cronus) ও রেয়ার (Rhea) জৈষ্ঠতম পুত্র। তাঁর ছিল তিন বোন ডিমিটার(Demeter), হেস্টিয়া(Hestia) ও হেরা(Hera) এবং দুই ভাই পোসেইডন (Poseidon) এবং সর্বকনিষ্ট জিউস (Zeus)। রোমানরা হেডিস্কে ডাকে প্লোটো (Pluto) নামে
হেডিস্ এর জন্মের পরই তাঁকে তাঁর পিতা ক্রোনাস গিলে ফেলেন। পরে জিউস তাঁর অন্যান্য ভাইবোনসহ তাঁকে ক্রোনাসের পেট থেকে বের করে আনেন। এর পরে জিউসের নেতৃত্বে তারা ক্ষমতা ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য তাঁদের পিতার সাথে যুদ্ধ শুরু করেন। এ যুদ্ধটি টাইটানোমেশি (Titanomachy) নাম বিখ্যাত। হেডিস্ এর একটি মুকুট ছিলো যেটি পরিধান করে তিনি অদৃশ্য হতে পারতেন। এক মুকুটি তাঁকে সাক্লোপস্রা দিয়েছিলো। যুদ্ধের পূর্বরাতে হেডিস্ তাঁর মুকুট পরে অদৃশ্য হয়ে টাইটানদের ক্যাম্পে চুপিচুপি ঢুকে পরেন এবং তাঁদের অস্ত্র ধ্বংস করে দেন। প্রায় ১০ বছর ধরে চলা এ যুদ্ধে অবশেষে হেডস্ ভাতৃত্রয়ের জয় হয়।
এর পরে তারা তিন ভাই বিশ্বচরাচর ভাগ করে নেন। হেডিস্-হন পাতালপুরী এবং মৃত্যুর দেবতা।
হেডিস্ এর স্ত্রী এবং পাতালপুরীর রানী ছিলেন পার্সিফোন (Persephone) যাকে হেডস্ অপহরণ করেন। পার্সিফোন ছিলেন স্বর্গের দেবতা জিউস(Zeus) এবং ডিমিটার(Demeter) এর কন্যা।
ভৌগোলিকভাবে হেডিসের রাজ্য পাতালপুরীর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে আরিকন(The Acheron), লীথি(The Lethe), ককাইটাস(The Cocytus), ফ্লেগেথন(The Phlegethon), স্টিক্স (The Styx) নামের পাঁচটি নদী।
এই পাঁচটি নদীকে পাঁচ নাম দেয়া হয়েছে।
আরিকন হলো অশ্রু নদী (river of woe); লীথি হলো বিস্মৃতির নদী((river of forgetfulness); ফেগেথন অগ্নি নদী (river of fire); ককাইটাস বিলাপনদী (river of lamentation) এবং স্টিক্স হলো পবিত্র শপথের নদী (river of unbreakable oath by which the gods swear)।
নদীগুলো পার হলে হচ্ছে পাতালপুরীর প্রবেশদ্বার যেখানে পাহারা দিচ্ছে তিনমাথা ওয়ালা কুকুর সেরবেরাস (Cerberus)।
মৃত্যুর পর হারমেস্ (Hermes) আত্মাগুলোকে পাতালপুরীর প্রবেশমুখ পর্যন্ত নিয়ে আসেন। এর পর চ্যারণ (Charon) আত্মাগুলোকে খেয়া নৌকা করে পাতালপুরীর প্রবেশদ্বারে নিয়ে আসেন। এরপর আত্মাগুলো গেট দিয়ে পাতালপুরীতে প্রবেশ করে। সেরবেরাস সবাইকেই প্রবেশ করতে দেয় কিন্তু কাউকে বের হতে দেয় না।
পাতালপুরীতে এসে আত্মাগুলোকে বিচারের সম্মুখীন হতে হয়। র্যা ডামান্তিস (Rhadamanthus), মাইনস (Minos I), এবং ইয়াকাস ( Aeacus) আত্মাগুলোর পাপ-পূণ্যের বিচার করতেন। পূণ্যবানেরা ইলিসিয়ানে (the Elysian Fields) যাওয়ার সৌভাগ্য লাভ করতে। অন্যদেরকে শাস্তি স্বরুপ পাঠানো হতো হয় সিসিপাস্ (Sisyphus) না হয় ট্যান্টালাসে (Tantalus)।
পৌরাণিক বিশ্বাসমতে হেডিস্ ছিলেন নিষ্টুর এবং লোভী দেবতা। তিনি সবসময় তাঁর অধীনদের সঙ্খ্যা বাড়াতে চায়তেন। তিনি সহজে কাউকে তাঁর রাজ্য থেকে বের হতে দিতে চায়তেন না। কেউ যদি তার রাজ্য থেকে পালাতে চেষ্টা করতো অথবা তাঁর কাছ থেকে কোনো আত্মা চুরি করার চেষ্টা করত তবে হেডিস্ ভীষণ ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠতেন।
পোষ্টে জিউস ছাড়া সব চরিত্রই আমার কাছে নতুন।আর এই ইতিহাসের কিছুই জানতাম না আমি। নতুন কিছু জানলাম আর আরো নতুন কিছু জানার অপেক্ষায় থাকলাম।
ভাল থাকবেন। 🙂
শুভেচ্ছা।
Hi there, I found your blog via Google while looking for a related topic, your site came up, it looks greatI’ve bookmarked it in my google bookmarks.